ঘেরাটোপ (পর্ব-১৪)

  • 13 November, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 126 view(s)
  • লিখেছেন : অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
কাগজ নিজের পায়ে সম্পূর্ণ না দাঁড়ানো অবধি নিজেদের পুঁজি নিয়ে ফাটকা খেলতে যাওয়া চলে না। দিনকাল বদলেছে অনেক। মাঝে মাঝে বাহারের মনে হয় আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে সবুজ শ্যাওলার বেড়ে ওঠা, বাধাহীন মসৃণ, মখমলি প্রলেপের মতো, অভ্যন্তরীণ সমাজের প্রত্যেক স্তরেই যেন ক্রনিক বাইপোলার সিন্ড্রোমের নিরবিচ্ছিন্ন আগ্রাসন। কখনও বা চূড়ান্ত ভালো লাগা। চূড়ান্ত পজিটিভিটির উদাহরণ। আবার কখনও বা চূড়ান্ত বিষাদগ্রস্ততা। সার্বিক মানবতার প্রতিই তখন বিশ্বাস উঠে যাবার জোগাড়। (ধারাবাহিক রচনা, পর্ব ১৪)

[১৪]

 

রাখী আর বাহার মুখোমুখি বসেছে। রাত অনেক। তবু এখনই কথা বলা প্রয়োজন। হিমেশ একপাশে দাঁড়িয়ে, বাহার ওকেও হাত নেড়ে বসতে বলে। সুহানি কফি নিয়ে এসেছে। অফিসের সামনের খাদটায় মেঘ ভরে এসেছে। রাখী খানিক সময় নেয়।

 

“কাঠুয়াতে ওরা বালি ফেলছে বাহার,” আবারও রাখী বলে ওঠে, “কিন্তু বিষয়টা আমাদের আরও গভীরে গিয়ে দেখতে হবে। তার কারণ, হিমেশ -” রাখী হাত তোলে, “তুমিই বলো নাহয়।” বাহার পিঠ সোজা করে বসে। কফিতে চুমুক দেয়।

 

“বলছি দিদি,” হিমেশ বেতের মোড়াটার উপর পা গুটিয়ে নেয়।

 

“আজ বিকেলে একটা ফোন পেয়েছিলাম। আমার লোক রাখা ছিল নালার আশেপাশেই। কোনও বেকায়দা কিছু হতে দেখলেই যেন আমাকে খবর দেয়। তেমনই বলা ছিল তাদের। সেই ছেলেদেরই একজন আমায় ফোন করল হঠাৎ। আন্দাজ সাড়ে ছটা, পৌনে সাতটা এইরকম সময়। আমরা  পৌঁছতে দেরি করিনি। কিন্তু গিয়ে যা দেখলাম,” কেমন অদ্ভুৎ ভাবে হাসে হিমেশ।

 

-“দেখলাম মনোহরজির গাড়ি রাখা রয়েছে বাইরেটায়!”

 

মনোহরলাল আদবানি, বয়স আটষট্টি থেকে সত্তর। দুঁদে ব্যবসাদার। ব্যবসা করতে করতে যাদের হাড়-মজ্জা-মাংসগুলোও পেঁচিয়ে ধবধবে হয়ে আসে, অথচ বাইরে থেকে টেরটিও পাওয়া যায় না, মনোহরলাল সেই গোত্রের জীব। অথচ নতুন কাগজ শুরু করতে গেলে এই মনোহরলালের কাছে না গিয়েও রাখীদের উপায় ছিল না। দিল্লী শহর তোলপাড় করে ফেলেও যখন স্থানীয় নতুন ইংরেজি কাগজের জন্য কোনও স্পনসর পাওয়া গেল না, রাখী কিন্তু ভেঙে পড়েনি একেবারেই। কেবল সে আরও বদ্ধপরিকর হয়েছিল। হলদোয়ানি – তার জন্মস্থান থেকেই নিজের এতদিনের যে স্বপ্ন – নিজের কাগজ, নিজেদের কাগজ – হলদোয়ানি ট্রিবিউন সে শুরু করবে। ঠিক সেসময়েই দিল্লীর কেউ তাকে মনোহরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। মনোহর প্রথমেই রাজি হননি। দোনামনায় ছিলেন খানিক। তারপর তখনই হঠাৎ দিল্লীর এক সেরা সাহিত্য-পত্রিকায় রাখীর এক নিবন্ধ-সিরিজ প্রকাশিত হয়, এবং সেই ধারাবাহিকের সাপেক্ষে ছোটখাটো কিছু পুরষ্কারও তার ঝুলিতে ওঠে। সেই খবর স্বভাবতই রাখী মনোহরের কাছে তুলে ধরে। তাঁকে রাজি করানোর প্রয়োজনেই। এমনই এক পুরষ্কার-অনুষ্ঠানে সংবাদ-জগতের এক কেষ্টবিষ্টুর সঙ্গে রাখীর সহাস্য ছবি দেখেই (অথবা অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে বোধহয়), মনোহর বিনিয়োগে রাজি হয়ে যান। মনোহরের অফিস থেকে বেরিয়ে রাখী প্রথম বাহারকেই ফোন করেছিল সেদিন।

 

… রাখী আকাশে নাক তুলে সেই গন্ধ নিতে চায়। পরাঠেওয়ালি গলির সেই সুগন্ধি কাবাবের সুবাস। মনে মনে রাখী আর বাহার বেশ কিছুটা সময় পিছিয়ে যায়। হাওয়াতে আরও কিসের সুগন্ধ ছিল সেদিন। রাখী আর বাহারের দেখা হওয়া …

 

-“রাজি হয়ে গেলেন মনোহরজি? আমি ভাবতেও পারছি না,” বাহার বলেছিল।

-“কেন? তুই শুরু থেকেই খালি আজেবাজে চিন্তা করে যাস কেন বল তো?” কপট রাগে রাখী বলে ওঠে।

-“জানিসই তো ভাই,” বাহার আপনমনে কাঁধ ঝাঁকায়, “পুঁজি ছাড়া কাগজ চলবে না আমরা জানি, কিন্তু পুঁজিকে সরাসরি ঘরে আনলেও তো ফ্যাকড়া অনেক। তার উপর এই মনোহরজির আবার মূল ব্যবসাটাই রিয়েল এস্টেটের।”

 

যদিও সে জানে মনোহর-ভিন্ন উপায়ন্তর নেই তাদের। হলদোয়ানি ট্রিবিউনের অলীক স্বপ্নকে বাস্তব করতে গেলে এমন একজন কাউকে শুরুতেই তাদের বেছে নিতে হত। কাগজ নিজের পায়ে সম্পূর্ণ না দাঁড়ানো অবধি নিজেদের পুঁজি নিয়ে ফাটকা খেলতে যাওয়া চলে না। দিনকাল বদলেছে অনেক। ভালো-খারাপের সমস্তটাই এখন জেনেবুঝে নিয়ে এগোনো প্রয়োজন। মাঝে মাঝে বাহারের মনে হয় আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে সবুজ শ্যাওলার বেড়ে ওঠা, বাধাহীন মসৃণ, মখমলি প্রলেপের মতো, অভ্যন্তরীণ সমাজের প্রত্যেক স্তরেই যেন ক্রনিক বাইপোলার সিন্ড্রোমের নিরবিচ্ছিন্ন আগ্রাসন। কখনও বা চূড়ান্ত ভালো লাগা। চূড়ান্ত পজিটিভিটির উদাহরণ। আবার কখনও বা চূড়ান্ত বিষাদগ্রস্ততা। সার্বিক মানবতার প্রতিই তখন বিশ্বাস উঠে যাবার জোগাড়।

 

“চল হুমায়ুন’স টুম্ব থেকে ঘুরে আসি,” বাহার প্রস্তাব দেয়, “একটু সেলিব্রেশন প্রয়োজন।” ঘাড় নেড়ে সায় দেয় রাখী, “কিন্তু আমাকে ফেরবার সময় ইণ্ডিয়া গেটের ওই মিষ্টি আম-কুলফিটাও খাওয়াতে হবে বলে দিচ্ছি, ওই তো সেদিন যে খেলাম। এইটেতে রাজি হলে তবে আমি যেতে রাজি আছি!” এমন দাবিদাওয়া চলতে চলতেই দুজনে স্কুটিতে সওয়ার হয়। অচেনা রাজধানী শহর। ফুলের মরসুম হঠাৎ। হু হু করে কানের পাশ দিয়ে হাওয়া ছুটছে। আলাইয়া বিলাবলের সুর।

 

“বেনামে মনোহরজিই ওই রিসর্টের মালিক। বেশ কিছু টাকার ইনভেস্টমেন্ট। কাঠুয়া নালা নিয়ে আপনারা স্টোরি করতে গেলে ওদিক থেকে আপত্তি আসতে পারে বোধহয়,” হিমেশ বাহারের দিকে তাকায়। হিমেশ ঠাণ্ডা মাথার ছেলে। হলদোয়ানিরই আদি বাসিন্দা। ট্রিবিউনের প্রথম দিন থেকেই রাখী আর বাহারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেও খেটেছে। স্থানীয় কোনও বিতর্কিত বিষয়ে খবর করতে গেলে রাখীরা প্রথম তারই মতামত নিয়ে এগিয়েছে। কখনও হিমেশ এমনটা বলেনি। এলাকায় মনোহরের ক্ষমতা সম্পর্কে হালকা আঁচ থাকলেও, সত্যি-সত্যি এমনটাও যে হতে পারে রাখীরা ভাবেনি। রাখী বলে ওঠে, “আমরা কি তাহলে মনোহরজিকে একবার জিজ্ঞেস করব এই ব্যাপারে? একবার কথা বলে দেখলেও যদি কোনও সল্যুশন বেরোয়।” যদিও কথাটা মুখ থেকে ছিটকে বেরনো মাত্রই, রাখীর নিজের প্রতি এক তীব্র ঘৃণার বোধ জেগে ওঠে। সেও কি তাহলে আপস করতে চায়?

 

তবু রাখী তার কথা ফেরানোর আগেই মাথা নাড়ে হিমেশ, “সম্ভব নয় ম্যাডাম। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি। খাতায় কলমে রিসর্টের মালিক যে, তার হাত অনেক লম্বা। এমনকি এমপি সাহেবের সাথে অবধি যোগাযোগ। মনোহরজি টাকা ঢালছেন। বড় কোনও কন্ট্র্যাক্ট মিলবে বোধহয়। নইলে শুধুমুধু তিনি টাকা ঢালবার মানুষ নন।”

 

“আমরা কি করব তাহলে বাহার?” রাখী মুখ ফেরায়। তার মুখে স্পষ্ট অস্বস্তির ছাপ। সে বলে ওঠে, “আমরা কোনওদিনই কাউকে জানিয়ে কোনও খবর করিনি। মনোহরজিকেও নয়। আমরা যে এই বিষয়টা জেনে ফেলেছি সেটা কি ওনাকে জানানো একান্ত প্রয়োজন? কি মনে হয়?” তার সুর পালটেছে।

 

বাহার মাথা নাড়ে, “উনি নিজে থেকেই জেনে যাবেন। আমরা কাগজের তরফে রিসর্ট-মালিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছি। তাছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের দিয়ে আমরা যে পিআইএলটা মুভ করিয়েছিলাম, তাতে যে আদতে আমাদেরই হাত ছিল সেই খবরও কি ওদের কাছে পৌঁছয়নি বলে মনে হয়?” বাহার কাঁধ ঝাঁকায়, “নাঃ, আমার বরং অবাকই লাগছে যে মনোহরজিই বা এতদিন কেন এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগের চেষ্টা করেননি? নাকি ওদিক থেকে এই বিষয়ে মনোহরজিকেই আদতে কিছু জানানো হয়নি? উঁহুঃ, এমনটাও তো হওয়ার কথা নয়,” দুহাতে মাথা খামচে ধরে, চোখ বুজে ভাবতে চেষ্টা করে বাহার, “নিশ্চয়ই কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে কোথাও।” রাখীর ফোনে মেসেজ টোন বেজে ওঠে। হাত তুলে নামটা পড়ে নিয়েই রাখী বাহারের দিকে তাকায়।

 

বেলা পড়ে এসেছে। বড় মিষ্টি গলার স্বর।

“আলাইয়া বিলাবল,” ফিসফিস করে রাখীকে বলে বাহার। সে চমকে ঘাড় ঘোরায়।

 

-“তুই তো বিলিতি সঙ্গীতের ভক্ত বলে জানতাম, ভারতীয় রাগসঙ্গীত নিয়ে আবার পড়লি কবে থেকে?” অবাক হয়ে রাখী জিজ্ঞেস করে। শেষ দুপুরের হুমায়ুন’স টুম্ব। নিপাট শয্যায় শায়িত সম্রাট। এই সময় গরম অল্প। ঘাসের গন্ধ পাওয়া যায়। সমাধিক্ষেত্রে লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। পর্যটকের আনাগোনা বন্ধ। আপন মনে রাখী আর বাহার ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ঠিক তখনই তাদের কানে গানের সুর ভেসে এল। বড় মিষ্টি গলার স্বর। কেউ বোধ করি গানের রেওয়াজে বসেছে। শহরপ্রান্তের এই সমাধিক্ষেত্রের নিস্তব্ধতায়। একটু খুঁজতেই স্বরের মালিককে খুঁজে পাওয়া গেল। বিরাট চত্বরের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে, আপন খেয়ালে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে রেওয়াজ করে চলেছে একজন। বয়স বোধ হয় তাদের আশেপাশেই।

 

রাখীরা একটু দূরত্ব রেখে কোনও শব্দ না করে বসে পড়ে। ওস্তাদের কোনও খেয়াল নেই। সে আপন মনে রেওয়াজ করে চলেছে। সম থেকে সমে ফিরছে। বিলম্বিত পেরিয়ে জোড়। রাখীরা সেই গান অবাক হয়ে শোনে কেবল। এমন গান রাখী এর আগে কোনওদিন শোনেনি। বাড়িতে চিরকাল হিন্দি ফিল্মের গান, অথবা বড় জোর গজল – এইসবই ক্যাসেটে বেজে এসেছে। তাও মা চলে যাওয়ার পর, তাদের বাড়িতে গানের পাট বন্ধ। রাখীর এখনই এসব ভাবতে ইচ্ছে করে না। কখন জানি সে বাহারের হাত নিজের মুঠিতে নেয়। গানের গতি বাড়ছে। আকাশে অনেক দূরে কোথাও অজস্র পাখির ঝাঁক উড়ে বেড়ায়। ছেলেটি গান থামিয়েছে। সে ফিরে তাকায়।

 

রাখীরা একটু অপ্রস্তুত বোধ করে। ছেলেটি আলতো হাসে। কথায় কথায় জানা যায় তার বাড়ি কাঠগোদাম। ওদের কথা হয়েছিল সেদিন। তিন ঠোঙা চিনেবাদাম, ডালমুট; আর শান্ত যমুনার জল। দুপুরের ছায়া পড়ে তাতে। ছায়া পড়ে সরে যায় কেমন। জানা গিয়েছিল ছেলেটি দিল্লীতে ছোটখাটো কাজ করে কোথাও। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই গান গাইবার শখ। নাড়া বেঁধে কিছুদিন শিখলেও সময় আর টাকার অভাবে বেশি দিন চালাতে পারেনি। তাই সে এভাবেই রেওয়াজ জারি রাখে। “মোবাইলে শুনে সেই গান তুলে নিতে চেষ্টা করি, তাও প্রতি মাসে নেটের পয়সা থাকে না।” একগাল হেসে ছেলেটি বলেছিল। রাখীরা ওকে বলেছিল, পরে কখনও হলদোয়ানিতে এলে সে যেন অবশ্যই তাদের সঙ্গে দেখা করে। তাদের দেখা হয়েছিল আবার। অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছিল তখন। অথচ যেমন ভাবে তাদের আবার দেখা হয়েছিল, তিনজনের কেউই বোধহয় তার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তবুও কপালের ফের। সেই প্রবল অদৃষ্টকে ঠেকানোর বিষয়েও তাদের কারোরই কোনও প্রতিরোধক্ষমতা ছিল না।

 

মেসেজে লেখা ছিল কেবল, “কথা বলতে পারি?” পুরষ্কার-অনুষ্ঠানের সেই কেষ্টবিষ্টু সাংবাদিককে হঠাৎ এত রাত্তিরে তাকে মেসেজ করতে দেখে রাখী অবাক হয়। সে বাহারকে মেসেজটা দেখায়। বাহার সন্দেহ করে না। কেবল ঠাট্টার সুরে বলে, “দেখই না এবার কি অফার আসে তোর জন্য? সোজা নিউ ইয়র্ক!” রাখী তবুও দোলাচলে ভোগে। এত রাত্তিরে এত বড় একজন মানুষ সরাসরি তার সঙ্গে কথা বলতে চান। সে খানিক ভাবতে চেষ্টা করে। তারপর মেসেজের জবাব দেয়, “নিশ্চয়ই। এখনই কি?”

 

কিছু সময়ের মাত্র বিরতি। মেসেজ ফিরে আসে, “ফোন করছি।” রাখী ফোন হাতে নিয়ে ভিতরে উঠে যায়। বাহার, হিমেশ বাইরে অপেক্ষা করে।

 

এই সময় এত কুয়াশা হয় না। হিমেশ বাহারের দিকে তাকায়। সামনের খাদটা আর দেখা যাচ্ছে না। দু’হাত দূরের কোনও জিনিসও আর স্পষ্ট নয়। এত রাত্তিরে এমন ভেজা, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় বাইরে বসে থাকলে সর্দি বসে যাবে। বাহার উঠে পড়ে। হিমেশকে বলে, “কাল এসো। আমরা দুজনে বরং একটু ভেবে দেখি কেমন ভাবে ব্যাপারটা ট্যাকল করা যায়।” সময় বয়ে যাচ্ছে। হিমেশ চলে যায়। আকাশে দমচাপা মেঘ। তারাদেরও আর দেখা যাচ্ছে না। বাহার ভিতর থেকে রাখীর গলার আওয়াজ পায়। সুহানি কি বাড়ি চলে গেছে? নাকি আজ রাতে সুহানি অফিসেই থাকবে বোধহয়। মেয়েটা বদ্ধ পাগল। এই হলদোয়ানি ট্রিবিউনে অবশ্য একগুচ্ছ পাগলকে সঙ্গে নিয়েই রাখী কারবার সাজিয়েছে। বাহার কফির কাপগুলোকে হাতে তুলে নিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে চেষ্টা করে। সে ঠিকই ভেবেছিল। সুহানি এখনও কম্পিউটারে বসে কপি এডিট করে চলেছে। বাকি আরও যে তিনজন স্টাফ রয়েছে, তারা সকলেই বাড়ি পালিয়েছে অনেকক্ষণ। বাহার পাশের ছোট কিচেন-সেটআপটাতে ঢুকে কাপগুলোকে নামিয়ে রাখে। ঠাণ্ডায় আলিস্যি লাগছে। কাল সকালেই সে কাপগুলোকে ধুয়ে রাখবে নাহয়। পিছন ঘুরে সে দেখতে পায় রাখী নিজের টেবলে এসে বসেছে। হাতের ফোন টেবলের উপরে নামানো। সুহানি টের পায়নি। বাহার কিন্তু আন্দাজ করতে পারে গণ্ডগোল। সে কিচেন থেকে বেরিয়ে রাখীর সামনে এসে দাঁড়ায়। মুখ তুলে সহজ দৃষ্টিতে রাখী তাকিয়েছে, “আমরা ঠিক পথেই এগিয়েছি বাহার। স্টেট অব উত্তরাখণ্ডের ইম্পেণ্ডিং ইকোলজিক্যাল ডিজাস্টার্স  নিয়ে আমাদের যে নতুন ধারাবাহিক, সোমবার থেকেই সেটা শুরু করে দিতে হবে। আমরা আপস করব না কোথাও।”

 

বাহার চুপ করে শুনছে। “আর হ্যাঁ, কাঠুয়া নালার স্টোরিটাকেই আমরা প্রথম এপিসোডে রাখব,” বাহার কিছু বলার আগেই রাখী তাকে থামিয়ে দেয়, “হ্যাঁ, রিসর্ট-মালিক যদি এর মধ্যে বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন – তা হলেও!” সুহানিও কম্পিউটার ছেড়ে মুখ তুলে তাকিয়েছে। এর আগে সে কখনও রাখীকে এতখানি কঠোর হতে দেখেনি। অথচ রাখী হাসছে। “লড়াই লেগে গেছে ভাইলোগ,” তার গলায় স্পষ্ট রসিকতার সুর, “রাখী শ্রীবাস্তব এত সহজে বিক্রি হতে আসেনি,” দাঁতে দাঁত চেপে সে উচ্চারণ করে, “এই কথাটাই এইবারে ওদের বুঝিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।”

(চলবে)

 

আগের পর্বের ঠিকানা – https://nariswattwo.com/welcome/singlepost/the-siege-serialised-novelette-series-thirteen

লেখক : বিজ্ঞানী, কথাসাহিত্যিক 

ছবি : সংগৃহীত 

0 Comments

Post Comment